Wednesday, July 14, 2021

ডিমেনশিয়া রোগে আপন মানুষ যখন জীবন থেকে হারিয়ে যায়

 




ডিমেনশিয়া রোগে আপন মানুষগুলো যখন জীবন থেকে হারিয়ে যায়!

"...for u I left my home, my land..."
 
দ্বাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভল-এ ইন্দ্রনীল ব্যানার্জী প্রযোজিত "পরীযায়ী" ম্যুভিটি দেখলাম। "পরীযায়ী" শব্দটা যাযাবর পাখীদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো।
সিনেমার মূল কাহিনি কলিকাতার একজন স্বনামে খ্যাত কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্টকে নিয়ে। যিনি তার পেশাগত জীবনে ছিলেন খুবই দায়িত্বশীল একজন ব্যক্তিত্ব। তার মধ্যে একসময় হঠাৎ করেই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হলো। এবং আপাতদৃষ্টিতে পুরোপুরি সুস্থ, শক্ত সমর্থ একজন মানুষ যখন ভুলে যাচ্ছেন সেটাও তিনি মনে করতে পাচ্ছেন না যে এই ভুলে যাওয়ার জন্য তিনিই মুলত দায়ী, অর্থাৎ ভুলটাকে যাচাই করে দেখার প্রবণতা ফিল্মের সেই কনসালট্যান্টের মাঝে দেখা যায়নি। স্ত্রী "অরু" ব্যাপারটা খেয়াল করে উদ্বিগ্ন হলেও যেহেতু এটা যে কোন রোগ হতে পারে সেই ব্যাপারে ধারণা না থাকায় তিনিও যথার্থ কোন উদ্যোগ নিতে পারেননি। একসময় তা সেই কনসালট্যান্ট-এর সহকারীর চোখে বিষয়টা গুরুতর আকারে ধরা পরে, যেদিন রোগী নিজের চেম্বার চিনতে পারছিলেন না।

এখানে কারো কিছু করার ছিলো না কারণ রোগী নিজেই বুঝতে পারছিলেন তার সমস্যা নিয়ে তাই তিনি ব্যাপারটিকে লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে যেয়ে নানারকম অদ্ভুত সব প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। এবং ঘটনাচক্রে একসময় তিনি হারিয়ে যান এবং বাসার ঠিকানা আর মনে করতে না পেরে বাসায় ফিরে আসা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি যার ফলে অনেক করুণ পরিণতির সম্মুখিন হতে হয়েছে এই মানুষটিকে। খুবই স্পর্শ করা এই ম্যুভিটি বাস্তবজীবনের সাথেই সুন্দর সাদৃশ্যপূর্ণ।

#ডিমেনশিয়া
উপরের বর্ণনাতে মানুষের স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার চুড়ান্ত রূপটিকে দেখানো হয়েছে যা ডিমেনশিয়া রোগ নামে পরিচিত।
স্মৃতিশক্তি প্রাথমিকভাবে হারিয়ে যাওয়াকে আমরা ভুলে যাওয়া বলে তেমন আমল দেই না। কিন্তু যখন এটা সুস্থ্য, স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে  প্রভাবিত করে তখন অবশ্যই এক
গুরুত্বের সাথে দেখাই উত্তম।

👉ডিমেনশিয়ার প্রভাব
এটা স্মৃতিশক্তি, চিন্তা, প্রতক্ষণ, ভাষা, জ্ঞানমুলক ক্ষমতা (গণনা, বিমুর্ত চিন্তা), বিচার করার ক্ষমতা এবং প্রাত্যহিক জীবনের মানুষের আচরণ, ব্যক্তিত্ব, ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে ক্ষতিকর ভাবে। ডিমেনশিয়ার প্রভাবে রোগী সাধারণত দেখা যায় অতীতের অনেক কথাই মনে রাখতে পারলেও বর্তমানের কোন কথা মনে করতে পারে না।

👉ডিমেনশিয়া কেন হয়?
ডিমেনশিয়া রোগটি কেন হয় এর মধ্যে যদিও ডায়াবেটিস, ধুমপান , অত্যধিক পরিমানে মদ্যপান, শারীরিক চর্চার অভাব ইত্যাদির কথা বলা ছাড়াও বংশগতভাবেও রোগী এর বাহক হতে পারেন। এছাড়া আরেকটি কারণ রয়েছে ডিপ্রেশান যেটি কমবেশি আমরা সবাই এর বাহক।
সাধারণত

-অত্যধিক প্রত্যাশা থেকে প্রাপ্তির ফলটা যদি অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে থাকে

-সাথের মানুষগুলো যদি অনেক বেশি অসহযোগীতা করতে থাকে

-কর্মক্ষেত্রে যদি উর্দ্ধতণ কতৃপর্ক্ষ কর্তৃক মানসিকভাবে নাযেহাল হয়ে থাকে ইত্যাদি।

ডিমেনশিয়া রোগকে বলা হয়ে থাকে সকল মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার জননী।

👉প্রতিরোধের উপায়

যেহেতু এই রোগটি মুলত মস্তিষ্কের নার্ভাস সিস্টেমের সাথে জড়িত, তাই এই রোগটির প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের পরামর্শই দেওয়া হয়ে থাকে। কেননা রোগটি পুর্ণরূপ পেয়ে গেলে পরে রোগীর কাছ থেকে কোনরকম সহযোগিতা পাওয়া যায়না বরং অনেকসময় উল্টো রোগী হিংস্র আচরণ প্রদর্শন করে থাকেন। তাই এই রোগের প্রাদুভার্বের শুরুতেই রোগীর প্রয়োজনীয় শারিরীক এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা জরুরী। শরীরকে স্টিমুলেট করতে পারে এমন কিছু ব্যায়ামও করা প্রয়োজন নিয়মিত।

আমরা যেন আমাদের প্রিয়জনকে ডিমেনশিয়ার মতো ভয়ানক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ্য জীবনে ধরে রাখতে পারি।
সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন।

তথ্যসূত্র:

উৎসর্গ: আমার প্রিয় মানুষগুলো যাদের ব্যক্তিত্বের কাছে আমি সারাজীবন পরাজিত থেকেই সুখবোধে আচ্ছন্ন। আমি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে বিশ্বাস করি যে, ডিমেনশিয়ার মতো রোগেও তাঁরা আমার স্মৃতিতেই থেকে যাবেন।


No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত পোস্ট

'অবদমিত অভিমান'- ২০১৭ এর বইমেলায় প্রকাশিতব্য সময় প্রকাশন এর গল্প সংকলনের বই

প্রথম গল্প লিখেছিলাম আজ থেকে ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে।