Wednesday, November 16, 2016

পড়ছি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর 'শ্রীকান্ত'


শরৎ বাবুর সাথে প্রথম সাক্ষাত কবে এই মুহুর্তে তা বলতে পারছিনা। কিন্তু এটুকু মনে আছে আমি ঈদের জামা কেনার টাকাটা আম্মার কাছ থেকে সেবার নিয়ে নিয়েছিলাম। এবং তা দিয়ে বেশ কয়েকটা ভলিয়্যুম বই কিনেছিলাম নিজের পাঠের সাধ মেটাবার জন্যে। সেসময়ই শরৎ বাবুর দুই খণ্ডের রচনাবলী কিনেছিলাম। সাথে বঙ্কিমবাবু, সুকান্ত মশায়ও ছিলেন বটে। বাংলা থেকে বাংলা অভিধান ব্যবহারের অভ্যেসটাও তখন থেকেই।
নিজের ভালোলাগা বা নিজের কাছে রাখার মতো কিছু কথা এখানে রাখলাম।

একটা নিষ্ফল অভিমান হৃদয়ের তলদেশ আলোড়িত করিয়া উপরের দিকে ফেনাইয়া উঠিতেছে।
সৃষ্টিকর্তা! এই অদ্ভুত অপার্থিব বস্তু কেনই বা সৃষ্টি করিয়া পাঠাইয়াছিলে, এবং কেনই বা তাহা এমন ব্যর্থ করিয়া প্রত্যাহার করিলে!
১১ নভেম্বর ২০১৬

দেহের ভিতর দিয়া বিদ্যুতের তীব্র প্রবাহ বহিয়া গেলে যে যেখানে আছে এক মুহূর্তে যেমন সজাগ হইয়া উঠে, ইহার কণ্ঠস্বরেও আমার সেই দশা হইল! চক্ষের পলকে সর্বাঙ্গের রক্ত চঞ্চল, উদ্দাম হইয়া বুকের উপর আছাড় খাইয়া পড়িতে লাগিল। কোনমতেই মুখ দিয়া একটা জবাব বাহির হইল না। এই কথাগুলি লিখিলাম বটে, কিন্তু জিনিসটা ভাষায় ব্যক্ত করিয়া পরকে বুঝানো শুধুই যে অত্যন্ত কঠিন, তা নয়, বোধ করি বা অসাধ্য। কারণ বলিতে গেলে, এই সমস্ত বহু-ব্যবহৃত মামুলি বাক্যরাশি—যেমন বুকের রক্ত তোলপাড় করা—উদ্দাম চঞ্চল হইয়া আছাড় খাওয়া—তড়িৎ প্রবাহ বহিয়া যাওয়া—এই-সব ছাড়া ত আর পথ নাই! কিন্তু কতটুকু ইহাতে বুঝাইল? যে জানে না, তাহার কাছে আমার মনের কথা কতটুকু প্রকাশ পাইল! আমিই বা কি করিয়া তাহাকে জানাইব, এবং সেই বা কি করিয়া তাহা জানিবে?
১২ নভেম্বর ২০১৬



পণ্ডিতেরা বলেন, বড়দের চাপে ছোটরা গুঁড়াইয়া যায়। কিন্তু তাই যদি হয়, তবে জীবনের প্রধান ও মুখ্য ঘটনাগুলিই ত কেবল মনে থাকিবার কথা। কিন্তু তাও ত দেখি না! ছেলেবেলার কথা-প্রসঙ্গে হঠাৎ এক সময়ে দেখিতে পাই, স্মৃতির মন্দিরে অনেক তুচ্ছ ক্ষুদ্র ঘটনাও কেমন করিয়া না জানি বেশ বড় হইয়া জাঁকিয়া বসিয়া গিয়াছে, এবং বড়রা ছোট হইয়া কবে কোথায় ঝরিয়া পড়িয়া গেছে। অতএব বলিবার সময়েও ঠিক তাহা ঘটে। তুচ্ছ বড় হইয়া দেখা দেয়, বড় মনেও পড়ে না।
১৩ নভেম্বর ২০১৬

ভালবাসাটার মত এত বড় শক্তি, এত বড় শিক্ষক সংসারে বুঝি আর নাই। ইহা পারে না এত বড় কাজও বুঝি কিছু নাই।
১৫ নভেম্বর ২০১৬

আমার বুকের কষ্টিপাথরে পাকা সোনার কষ ধরানো আছে, সেখানে পিতলের দোকান খুলিলে খরিদ্দার জুটিবে না।


অভিমান যে এত মধুর, জীবনে এই স্বাদ আজ প্রথম উপলব্ধি করিয়া শিশুর মত তাহাকে নির্জনে বসিয়া অবিরাম রাখিয়া-চাখিয়া উপভোগ করিতে লাগিলাম।


যে-সমাজ আপনাকে এতটুকু প্রসারিত করিবার শক্তি রাখে না, সে পঙ্গু আড়ষ্ট সমাজের জন্য মনের মধ্যে কিছুমাত্র গৌরব অনুভব করিতে পারিলাম না। 


দুঃখ জিনিসটা অভাব নয়, শূন্যও নয়। ভয় ছাড়া যে দুঃখ, তাকে সুখের মতই উপভোগ করা যায়।



যেন ইহাদের রক্তমাংস আছে; যেন তার ভিতরে প্রাণ আছে—নাই বলিয়া অস্বীকার করিলে যেন ইহারা আঘাত করিয়া বলিবে, চুপ কর। মিথ্যা তর্ক করিয়া অন্যায়ের সৃষ্টি করিয়ো না।

যে অপরাধ একজনকে ভূমিসাৎ করে দেয়, সেই অপরাধই আর-একজন হয়ত স্বচ্ছন্দে উত্তীর্ণ হয়ে চলে যায়। তাই সমস্ত বিধিনিষেধই সকলকে এক দড়িতে বাঁধতে পারে না।

 নিজের জীবনের সার্থকতার ভিতর দিয়াই শুধু সংসারের অপরের জীবনের সার্থকতা পৌঁছাতে পারে। আর ব্যর্থ হলে শুধু একটা জীবন একাকীই ব্যর্থ হয় না, সে আরও অনেকগুলো জীবনকে নানা দিক দিয়ে নিষ্ফল করে দিয়ে তবে যায়।...

স্নেহের গভীরতা কিছুতেই কালের স্বল্পতা দিয়া মাপা যায় না; এবং এই বস্তুটা কাব্যের জন্য কবিরা কেবল শূন্য কল্পনাই করেন নাই—সংসারে ইহা যথার্থই ঘটে। 

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত পোস্ট

'অবদমিত অভিমান'- ২০১৭ এর বইমেলায় প্রকাশিতব্য সময় প্রকাশন এর গল্প সংকলনের বই

প্রথম গল্প লিখেছিলাম আজ থেকে ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে।