Thursday, December 31, 2015

২০১৫-মনের গলি ঘুপচিতে ঘুরে বেড়ানো কথারা


পাঁচশত টাকার নোটের দশটা বাণ্ডিল...
আচ্ছা "বাণ্ডিল" কথাটাকি বাংলা শব্দ ?
হওয়ার কথা না। সেক্ষেত্রে বান্ডিল হবে বানানটা। কারণ বিদেশী শব্দে উঁচু জাতের "ণ" এর প্রবেশে উন্নাসিকতা আছে। নিজেকে কখনো কখনো "ণ" গোত্রীয় মানুষ মনে হয় । আবার যখন বান্ধবী আমায় খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে খুঁজে পাওয়ার বলে "তোরে জুতা
দিয়া পিডানো দরকার" তখন ঠিকই নিজের পছন্দের জুতোর পাটিটা ছুঁড়ে মারি ওর দিকে..."এই নাও, আমার জুতা দিয়াই আমারে পিডাও"।

একটা বিষয় বুঝেছি। শব্দর সমৃদ্ধতাই সাহিত্য চর্চার সমৃদ্ধিতে সহায়ক । অভিধানটা দেখে নিতে হবে, "বান্ডিল" শব্দটা মাথায় খোঁচাচ্ছে ।
যেমন গত দু'দিন ধরে ইমু খোঁচাচ্ছে মাথার ভেতরে । যাব না যাব না করেও দশটা এগারোটা বাজলেই উশখুশ করতে থাকি ইমুর সাথে একটু কথা বলার জন্যে । তেমন কিছুই না । প্রেমালাপ হয়নি আমাদের কখনো । আমরা দু'জনই দু'জনের ঘরের মানুষটির প্রতি বিশ্বস্ত । ইমু আমায় একবার খুব গভীর করে জিজ্ঞেস করেছিল আমি আমার বরকে নিয়ে সুখী কিনা...। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম ওর কথায় । কেন অমন জিজ্ঞেস করলো...আমিতো পুরোপুরি সুখী ।
একাধিকবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে, আনফ্রেন্ড করেছে, ব্লক করেছে, আনব্লক করেছে । আমি এই ছেলের আচরণের আগামাথা কিছুই বুঝি না । তবে আমি সাবধান থাকি । সাবধান কেন থাকি সেকথা ওকে কখনোই বলিনি ঠাট্টা ছলেও । বড্ড বেশিই সুদর্শন, বড্ড বেশিই মেধাবী। এরকম ছেলেরা আগুন হয় । ওদের কাছে গেলে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । পুড়ে যেতে চাইনা । ওর সাথে সম্পর্কটা তুই তোকারীর...যেনো সেই শৈশব থেকে ওর সাথে আমার মারামারি করে কেটেছে সময় । অথচ ও জানেনা ওর শৈশব থেকেই ওকে আমি চিনি । চিনি বলার চেয়ে জানি বলা ভালো । আমি ওর সব জানি । ওর মনের গভীরে কোথায় কী হচ্ছে তাও জানি । ডায়েরি লিখলে এই এক সমস্যা...মনের গলি ঘুপচিতে কী ঘুরোঘুরি করে তা বেরিয়ে আসে অবলীলায় । ডায়েরির মতো আপনজন কি আর কেউ আছে ?
মানুষ নিজ পরিচয়ে মনের অনেক কথাই বলতে পারেনা । তাই ডায়েরিতে সে না বলা কথা সচ্ছন্দে লিখে ফেলে । কিন্তু ডিজিটাল এই যুগে আমরা পছন্দ-অপছন্দের অনেক কথাই ছদ্ম পরিচয়ে অন্যের কাছে উপস্থাপন করি ।
যেমনটি ঘটে ব্লগে । ব্লগিং এর শুরুতে না বুঝেই মাল্টি খুলেছি। কারো ক্ষতি করতে নয়। বরং এক নিক থেকে একেকটাইপের লেখা লিখবো সেই আশায় । কিন্তু তখনো বুঝতাম না যে, ্ক নিক থেকেই সব সম্ভব যদি আমি সৎ হই । যদি আমার ভেতরে আত্মবিশ্বাস থাকে । আত্মবিশ্বাসের অভাবে অনেকেই মাল্টি দিয়ে নিজের ব্লগে মন্তব্য করে বা নীরবে প্লাস বাটনটি চেপে যায় । কী বলবো নিজের পোস্টে আমি নিজেই একসময় প্লাস দিতাম । এখন হাসি । আর অন্যের এসব কার্যকলাপ দেখে তাদের জন্যে সমব্যথী হই । "সমব্যথী" হই এই কারণে যে, দরিদ্র মানসিকতার এই সব মানুষদের আত্মবিশ্বাস নেই যেমন তেমনি আত্মসম্মানটুকুও নেই । আমি হাসি আমার নিজের একসময়ের কথা ভেবে, সেই সাথে বর্তমানের তাদের কথা ভেবে । আগে মন্তব্য দেখে হাসতাম এখন লাইক বাটন কে কে চাপলো সেগুলো দেখা যাওয়ায় দারুণ সুবিধে হয়েছে । দেখতে সুবিধে হয়। অনেক মাল্টি নিককে চিনতে পারি, কিন্তু মুখ খুলতে ইচ্ছে করেনা । নিজেকে সুশীল ভাবতে ভালোই লাগে । আবার মাঝে মাঝে বিদ্রোহ, দেশ প্রেম চাগা দিয়ে উঠে । তখন একটু নড়ে চড়ে বসে কিবোর্ডে ধাক্কা লাগাই ।
দেশ প্রেমের দোহাই দিয়ে ব্লগে খিস্তি চলছে, এগুলোকে অনেকেই শুধুমাত্র দেশপ্রেমের মুলা দেখিয়ে জায়েজ করতেও ভালোবাসেন । কিন্তু খিস্তি কখনো ভব্যতার মধ্যে পড়েনা । মুক্তিযুদ্ধে কৌশল, বীরত্ব, সাহস, ভালোবাসা ছিল সম্বল, খিস্তি নয় । খিস্তি শোষন করে যাওয়া দেশটির শোষকগোষ্ঠীর মুখে চলতো, আমাদের কেন চলবে ?
মাল্টি নিকের পেছনের মানুষগুলোকে আমি চিনি। কেউ কেউ যথেষ্ট মেধাবী সেটা যেমন জানি, কেউ কেউ আসলেই মেধাহীন, অসভ্য সেটাও তেমন জানি । জানি অন্যকে বাগে রেখে নিজের নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা করা মানুষগুলোকেও । আমার এসবে কিছুই যায় আসে না এখন আর ।
আমি এখন হিট নিয়ে লালায়িত নই । একসময় ছিলাম মিথ্যে বলবো না । লাইক কম দেখে মন খারাপ লাগতো বলে নিজের এই নিক দিয়েই চোরা পথ দিয়ে লাইক বাটন চাপতাম, একটা লাইকতো বাড়তো, নাকি? ব্লগ কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা খেয়াল করেনি । হয়তো আমার মতো আরো অনেকেই এই বাটনটার ব্যবহার করেছে। তবে হিটখোর যারা তারা নিজের মাল্টি দিয়ে হিট কামায় এটা সবসময়েই হয়েছে এখনও হয় ।
কিন্তু দুঃখ লাগছে ব্লগে ক্যাচাল দেখে । একটা সময় ক্যাচাল না হলে উসখুস লাগতো, কিন্তু তাই বলে নোংরা ভাষায় বাপ-মা তুলে জঘন্য গালাগালি ! কেমন তোমার শিক্ষা ? কেমন তোমার বেড়ে উঠা ? জ্বালাটা আসলে কোথায় বলতো ?
অনেক কিছুই বলতে পারিনা। বলতে চাই না । জানি বললে আর ব্লগিং করতে হবেনা । আমার পেছনে কয়েকটা সিন্ডিকেট সজাগ হয়ে যাবে। জঘন্য ভাষায় বাজে কথা বলবে । যেমন বলেছিল ওয়ার্ডপ্রেসে আলাদা ব্লগ সাইট খুলে । অথচ আমি কারো সাতে পাঁচে নেই। এক একাই ব্লগিং করি ।
সংকলনে ব্লগের দারুন কিছু লেখা মিস করি নিয়মিত । অথচ হিটের ভীড়ে বেচারা লেখাগুলোর কোন পরিচয় নেই । নেই ওদের দিকে কারো তাকানোর সময় । "কারো" শব্দটা বললেতো নিজেকেই অপরাধী মনে হয় । আমিই কয়জনের লেখায় যাই ? উদ্দেশ্যমূলক ব্লগিং আমি কোনকালেই করতে পারিনি । অথচ সবসময়ই উদ্দেশ্যমূলক ব্লগিং করা চেষ্টা করেছি । আমার ব্লগে যারা মন্তব্য করে তাদের ব্লগে যাওয়ার চেষ্টা, আন্তরিকতা আমার সবসময় থাকলেও নিয়মিত কাজটি করতে পারিনি কোনকালেই ।
যারা সত্যিকারের ভালো লেখেন তারা আমার ব্লগে না আসরেও চেষ্টা করেছি তাদের লেখায় মন্তব্য করে অনুপ্রাণিত করতে, কিন্তু কাউকে কাউকে বেশি মাথায় তোলাতে তারা নিজেদেরকে হেডম ভাবতে শুরু করতেন, সেটাও বেশ দেখতে পেতাম । দুঃখ যে পাইনি সেকথা বলবো না । যেচে পড়ে অনেকের অনেক সহযোগিতা করেছি। অনেককেই সামনে আনার চেষ্টা সচেতন ভাবে করেছি। কখনো ব্লগ ছেড়ে দিলে সবই লিখবো বই আকারে । দুঃখগুলো পুষে রাখতে রাজি নই । প্রিন্টেড ভার্সনে দুঃখের বোঝা কমাবো ।

bundle ইংরেজি শব্দ। কাজেই "ণ" হওয়ার কোন সুযোগ নেই । ন+ড হবে । বাংলা বানান নিয়ে কিছু কাজ করা ইচ্ছে ছিল । ব্লগে আমার নিজের বানানতো বটেই অনেকের বানানের যাচ্ছেতাই অবস্থা দেখে মন খারাপ লাগতো । এতো বড় ব্লগ প্লাটফর্মে যদি ভুল বাংলার চর্চা হয় তবে পরবর্তী প্রজন্ম অনলাইনে বানান সার্চ দিয়ে ভুলটাকেই শুব্ধ বলে জানবে । শুরু করেছিলাম বানান অভিযান । কিন্তু যারা আমার ব্লগে নিয়মিততো নাই বরং অনিয়মিত তাদেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠলো আমার বানান পোস্ট । এবং তার প্রকাশও সরাসরিই ছিল । আমি খুব বিরক্ত হলেও মুখে কিছুই বলিনি। অথচ বলতে পারতাম অনেক কথাই । আমার এখন আর ভালো লাগে না।
প্রিয় এক ব্লগার একটা সংকলন করা জন্যে যেচে ধরেছিল । সংকলন মানেই হিট । কিন্তু সংকলন করার মতো যথেষ্ট মনোযোগ আমার নেই । আমাকে এখন বাচ্চাদের জীবনের হিট নিয়ে মনোযোগ দিতে হচ্ছে । ইন্টারনেটের ধীরগতি একটা বাজে ব্যাপার । মাসে অনেকগুলো টাকা খরচ করেও মন মতো সার্ভিস পাই না । ভালোবাসি এই দেশকে কিন্তু টাকা দিয়ে সময়ের অপচয়, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, ফরমালিন, কার্বন মনোক্সাইড বিষ কিনছি নিয়মিত । নেই গুড গর্ভনেন্স । এই সব ট্রেনিং আমি করে কী হবে ? আমি এইসব ট্রেনিং করে আরো ফ্রাস্টেটেড হবো কারণ আমি এসবের গলদগুলো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে ভালোভাবে বুঝতে পারছি । আমার মতো আম জনতার এসব বোঝার দরকার নেই । যাদের বোঝার দরকার তারা ভ্যাকেশনে বিশ্বের বড় বড় সাগরের পারে ছুটি কাটাচ্ছেন । বিশুদ্ধ হাওয়ায় বুক ভরে অক্সিজেন নিচ্ছেন । আর দেশে ফিরে এসি গাড়ি, এসি ঘরে থাকছেন । তাদের কোন সমস্যাতো নেই। তারা কেন আমার মতো আম কাঠাল জনতার কথা ভাববেন । তাও ভালো তারা তো ভালো আছেন। ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো এটা দেখেই আমার আনন্দিত হওয়া উচিত ।
আচ্ছা ডায়েরি লিখতে বসলেই বুঝি এভাবে লাগাম ছাড়া কথা বলতে হয়?
আমি কেন এসব লিখছি। এই লেখাতো ব্লগে প্রকাশ করবো...কেউ যে এসে বাজে মন্তব্য করবে না তার নিশ্চয়তাতো ব্লগ কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে না । এখানে পোস্ট মডারেশন ব্যবস্থা । ঠিক এই দেশটার ছায়া যেনো এই ব্লগটা ।
ধর্ষণ হয়ে যাবার পরে শুরু হয় বিচারের তোরজোর...কিন্তু ধর্ষণ, টিজিং, নির্যাতন, খুন কমছে না । প্রিয় ভালোবাসার এই সামহোয়্যারইন ব্লগ আর প্রিয় এই প্রাণের দেশটা যেনো একে অপরের চেহারা ধারণ করেছে ।

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত পোস্ট

'অবদমিত অভিমান'- ২০১৭ এর বইমেলায় প্রকাশিতব্য সময় প্রকাশন এর গল্প সংকলনের বই

প্রথম গল্প লিখেছিলাম আজ থেকে ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে।