বাংলা একমাত্র ভাষা যা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতির দাবিতে প্রাণ দিতে হয়েছে, ঝরাতে হয়েছে রক্ত ।
যার সম্মানে ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে ।
এমন একটি ভাষার প্রতিনিধিত্বকারী দেশ
হিসাবে এই ভাষার সম্মান আমরা কতোটুকু রক্ষা করছি তা অনেক সময়ই প্রশ্নের সম্মুখীন ।
সেই সমস্যা নিয়ে লিখতে বসেছি সেই সমস্যায় আমি নিজেও আক্রান্ত । কিন্তু আমার সৌভাগ্য যে, আমি বুঝতে পারছি আমার সমস্যা এবং সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছি, সেই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি ।
আমরা কেন নিজের ভাষাতেই এতো বানান ভুল করে থাকি ? ভাবতে যেয়ে খেয়াল করলাম-
১. মাতৃভাষা হওয়াতে "পারিইতো" এমন মনোভাব ।
২. শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে বানানের প্রতি যত্নবান না হওয়া । ( শিশুদের প্রতি এই কাজটি বড়দের, শিক্ষকদের)
৩. পরবর্তী জীবনে নিজেও বানানে যত্নবান না হওয়া, সচেতন না হওয়া ।
৪. নিয়মিত অভিধান ব্যবহারে আগ্রহ না থাকা ।
৫. কম শিক্ষিত, অসচেতন লোকদের দ্বারা ব্যানার, দেয়াল লিখনের কাজ করানো । আর সেই ভুল বানান গুলিতেই আমাদের চোখ অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া ।
৬. অন্তর্জালে ভুল বানান বার বার ব্যবহারের কারণে কোন বানান নিয়ে সংশয় দেখা দিলে আমরা অভিধান দেখার পরিবর্তে ইন্টারনেটে খোঁজ করি এবং ভুল বানান দেখে তা নিয়েই নিশ্চিত হতে চাই ।
এমন আরো অনেক অনেক কারণ থাকতে পারে ।
সর্বোপরি নিজেদের সচেতনতা, আন্তরিকতার অভাবই বানান ভুল হওয়ার কারণ ।
এই ছবিটি যিনি তৈরি করেছেন এবং এই "মা টেলিকম" এর পরিচালনাকারীর কাছ থেকে প্রত্যাশা ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই কম । কারণ আমি ধরেই নিচ্ছি এদের মধ্যে ভাষাজ্ঞানের অভাব যথেষ্ট পরিমাণে আছে । তাই "সীম" যে "সিম" হওয়া উচিত বা "মেমোরী" যে "মেমোরি" হওয়া উচিত সেই শুদ্ধ বানান আশা করা যাচ্ছে না জোরালো ভাবে ।
এই রেস্টুরেন্ট এর ছবিটি ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে তোলা হলেও ঢাকা সহ সারা দেশেই এমন অসংখ্য রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দনভাবে ভুল বানানে "রেষ্টুরেন্ট" লিখে চালানো হচ্ছে । এই সব রেস্টুরেন্ট এর পরিচালনাকারীরা যথেষ্ট টাকাওয়ালা হওয়ার পরও শুধুমাত্র সচেতনতা এবং ভাষাগত জ্ঞানের অভাবে এমনটি চলছে...বলার কি কেউ আছে ?
"স্টিল" "ইস্টার্ন" এই ধরনের বানানগুলোকে অনেক স্থানেই দেখা যায় "ষ্টীল" "ইষ্টার্ণ" এই ধরনের বানানে লেখা হয়, লেখা হচ্ছে বহুতল ভবনের নামে, লেখা হচ্ছে বড় বড় শপিং সেন্টারের গায়ে ।
Oxford Advanced Learner's Dictionary তে "corner" নিয়ে বলা হয়েছে a part of sth where two or more sides, lines or edges join এর অরিজিন হলো Latin "cornu" ।
কিন্তু বাংলা অভিধানে কর্ণার বলতে কোন শব্দ নেই । এছাড়া "কর্ণ" দিয়ে মহাভারতের কুন্তীর কুমারীকালের পুত্রকে বোঝানো হয়েছে । এছাড়া "কর্ণ" দিয়ে আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয় কে বোঝানো হয়েছে যা "কান" নামে সুপরিচিত ।
ছবিটি এলিফ্যান্ট রোডের মেরী স্টোপস ("মেরি" হওয়া উচিত) ক্লিনিক থেকে নেওয়া ।
জিজ্ঞেস করেছিলাম এই বানান নিয়ে । আমাকে বলা হয়েছে এসব কাজ হেড অফিস থেকে করা হয়, তবে তারা পরবর্তীতে এই বানান নিয়ে জানানোর চেষ্টা করবে ।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো আমাদের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্তৃপক্ষই নিজের ভাষা নিয়ে সচেতন নয় ।
এর প্রতিফলন দেখা যায় দেয়াল জুড়ে শোভা পাওয়া এইসব বিজ্ঞাপন ।
এই প্রতিষ্ঠানটির সামনে থেকে তুলে আনা হয়েছে এই ছবিটি ।
নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী মারি ক্যুরির নামে করা এই স্কুলটির সাইনবোর্ড দেখিয়ে তাদের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় এক ব্যক্তিকে বানানের ব্যাপারে বলাতে তিনি প্রথমে সন্দেহ প্রকাশ করেন । তারপর বলেন "কুরী" শব্দটি ঠিক আছে । তারপরও যখন আমি নিশ্চিত করতে চাইলাম তিনি পরে দেখবেন বলে এড়িয়ে যান বিষয়টি ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক এই ইমেজটি দিলাম সচেতন হওয়ার জন্য ।
অনলাইন যোদ্ধাদের ভাষা সম্পর্কে সচেতনতা :
অনেকেই সচেতন নিজের মায়ের ভাষা , প্রাণের ভাষার ব্যবহারে ।কিন্তু অনলাইনে নিজের খেয়াল খুশি মতো ভাষার ব্যবহারে, অন্যকে অসম্মান করতে আমরা বেছে নেই ভাষার কদর্য ব্যবহারিক রূপটি । যা ভাষাকে সম্মানিত করে না । বরং এতো সংগ্রামের, গৌরবের ভাষাটিকে করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত নির্যাতন ।
একটি সুপারিশ :
অন্তত এই মাসে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত একটি অভিধান কিনে (যাদের নাই তাদের জন্য প্রযোজ্য) এবং তা নিয়মিত ব্যবহারের অভ্যাস করা ।
তথ্য সুত্র:
১. বাংলা ভাষা আন্দোলন
২. আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস
৩. মারি ক্যুরি
৪. শুদ্ধ বলা শুদ্ধ লেখা : রণজিৎ বিশ্বাস
৫. মাতৃভাষা সংকট ও মাতৃভাষা আন্দোলন : সম্পাদনা ড. প্রথমা রায় মণ্ডল
৬. বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান
৭. ছবি : নিজ অ্যালবাম থেকে নেওয়া
যার সম্মানে ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে ।
এমন একটি ভাষার প্রতিনিধিত্বকারী দেশ
হিসাবে এই ভাষার সম্মান আমরা কতোটুকু রক্ষা করছি তা অনেক সময়ই প্রশ্নের সম্মুখীন ।
সেই সমস্যা নিয়ে লিখতে বসেছি সেই সমস্যায় আমি নিজেও আক্রান্ত । কিন্তু আমার সৌভাগ্য যে, আমি বুঝতে পারছি আমার সমস্যা এবং সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছি, সেই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি ।
আমরা কেন নিজের ভাষাতেই এতো বানান ভুল করে থাকি ? ভাবতে যেয়ে খেয়াল করলাম-
১. মাতৃভাষা হওয়াতে "পারিইতো" এমন মনোভাব ।
২. শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে বানানের প্রতি যত্নবান না হওয়া । ( শিশুদের প্রতি এই কাজটি বড়দের, শিক্ষকদের)
৩. পরবর্তী জীবনে নিজেও বানানে যত্নবান না হওয়া, সচেতন না হওয়া ।
৪. নিয়মিত অভিধান ব্যবহারে আগ্রহ না থাকা ।
৫. কম শিক্ষিত, অসচেতন লোকদের দ্বারা ব্যানার, দেয়াল লিখনের কাজ করানো । আর সেই ভুল বানান গুলিতেই আমাদের চোখ অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া ।
৬. অন্তর্জালে ভুল বানান বার বার ব্যবহারের কারণে কোন বানান নিয়ে সংশয় দেখা দিলে আমরা অভিধান দেখার পরিবর্তে ইন্টারনেটে খোঁজ করি এবং ভুল বানান দেখে তা নিয়েই নিশ্চিত হতে চাই ।
এমন আরো অনেক অনেক কারণ থাকতে পারে ।
সর্বোপরি নিজেদের সচেতনতা, আন্তরিকতার অভাবই বানান ভুল হওয়ার কারণ ।
এই ছবিটি যিনি তৈরি করেছেন এবং এই "মা টেলিকম" এর পরিচালনাকারীর কাছ থেকে প্রত্যাশা ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই কম । কারণ আমি ধরেই নিচ্ছি এদের মধ্যে ভাষাজ্ঞানের অভাব যথেষ্ট পরিমাণে আছে । তাই "সীম" যে "সিম" হওয়া উচিত বা "মেমোরী" যে "মেমোরি" হওয়া উচিত সেই শুদ্ধ বানান আশা করা যাচ্ছে না জোরালো ভাবে ।
এই রেস্টুরেন্ট এর ছবিটি ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে তোলা হলেও ঢাকা সহ সারা দেশেই এমন অসংখ্য রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দনভাবে ভুল বানানে "রেষ্টুরেন্ট" লিখে চালানো হচ্ছে । এই সব রেস্টুরেন্ট এর পরিচালনাকারীরা যথেষ্ট টাকাওয়ালা হওয়ার পরও শুধুমাত্র সচেতনতা এবং ভাষাগত জ্ঞানের অভাবে এমনটি চলছে...বলার কি কেউ আছে ?
"স্টিল" "ইস্টার্ন" এই ধরনের বানানগুলোকে অনেক স্থানেই দেখা যায় "ষ্টীল" "ইষ্টার্ণ" এই ধরনের বানানে লেখা হয়, লেখা হচ্ছে বহুতল ভবনের নামে, লেখা হচ্ছে বড় বড় শপিং সেন্টারের গায়ে ।
Oxford Advanced Learner's Dictionary তে "corner" নিয়ে বলা হয়েছে a part of sth where two or more sides, lines or edges join এর অরিজিন হলো Latin "cornu" ।
কিন্তু বাংলা অভিধানে কর্ণার বলতে কোন শব্দ নেই । এছাড়া "কর্ণ" দিয়ে মহাভারতের কুন্তীর কুমারীকালের পুত্রকে বোঝানো হয়েছে । এছাড়া "কর্ণ" দিয়ে আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয় কে বোঝানো হয়েছে যা "কান" নামে সুপরিচিত ।
ছবিটি এলিফ্যান্ট রোডের মেরী স্টোপস ("মেরি" হওয়া উচিত) ক্লিনিক থেকে নেওয়া ।
জিজ্ঞেস করেছিলাম এই বানান নিয়ে । আমাকে বলা হয়েছে এসব কাজ হেড অফিস থেকে করা হয়, তবে তারা পরবর্তীতে এই বানান নিয়ে জানানোর চেষ্টা করবে ।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো আমাদের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্তৃপক্ষই নিজের ভাষা নিয়ে সচেতন নয় ।
এর প্রতিফলন দেখা যায় দেয়াল জুড়ে শোভা পাওয়া এইসব বিজ্ঞাপন ।
এই প্রতিষ্ঠানটির সামনে থেকে তুলে আনা হয়েছে এই ছবিটি ।
নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী মারি ক্যুরির নামে করা এই স্কুলটির সাইনবোর্ড দেখিয়ে তাদের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় এক ব্যক্তিকে বানানের ব্যাপারে বলাতে তিনি প্রথমে সন্দেহ প্রকাশ করেন । তারপর বলেন "কুরী" শব্দটি ঠিক আছে । তারপরও যখন আমি নিশ্চিত করতে চাইলাম তিনি পরে দেখবেন বলে এড়িয়ে যান বিষয়টি ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক এই ইমেজটি দিলাম সচেতন হওয়ার জন্য ।
অনলাইন যোদ্ধাদের ভাষা সম্পর্কে সচেতনতা :
অনেকেই সচেতন নিজের মায়ের ভাষা , প্রাণের ভাষার ব্যবহারে ।কিন্তু অনলাইনে নিজের খেয়াল খুশি মতো ভাষার ব্যবহারে, অন্যকে অসম্মান করতে আমরা বেছে নেই ভাষার কদর্য ব্যবহারিক রূপটি । যা ভাষাকে সম্মানিত করে না । বরং এতো সংগ্রামের, গৌরবের ভাষাটিকে করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত নির্যাতন ।
একটি সুপারিশ :
অন্তত এই মাসে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত একটি অভিধান কিনে (যাদের নাই তাদের জন্য প্রযোজ্য) এবং তা নিয়মিত ব্যবহারের অভ্যাস করা ।
তথ্য সুত্র:
১. বাংলা ভাষা আন্দোলন
২. আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস
৩. মারি ক্যুরি
৪. শুদ্ধ বলা শুদ্ধ লেখা : রণজিৎ বিশ্বাস
৫. মাতৃভাষা সংকট ও মাতৃভাষা আন্দোলন : সম্পাদনা ড. প্রথমা রায় মণ্ডল
৬. বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান
৭. ছবি : নিজ অ্যালবাম থেকে নেওয়া
No comments:
Post a Comment