খেলা দেখে গতরাতে কন্যা মন খারাপ করে ঘুমাতে এসেছে। ছোটমানুষ অনেক কিছুই হিসাবে মেলাতে পারেনা...সে জয়কেই একমাত্র প্রাপ্তি মনে করে।
কিন্তু আজকে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় আমাকে জিজ্ঞেস করলো, মা, তুমি আন্তর্জাতিক নারী দিবস
নিয়ে কোন লেখা লিখলানা?
তার স্কুলে এই দিবসটি পালনের আয়োজন চলছে যেখানে সে পোস্টার বানানোর দায়িত্বে আছে।
আমি হেসে জবাব দিয়েছি...দেখি লিখবো হয়তো, আগে ... কাজটা শেষ করি (পেশাগত কিছু জরুরী কাজ করতে হচ্ছে)।
অনেকেরই মনের মেঘ কেটে যাবে আগামীকালই...তখন আপনি মন খারাপ করা থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবেন...
নারী দিবস ১ দিন আর পুরুষ দিবস বছরের বাকী সব দিন।...
সাধারণত তেমনই হয়।
এই দিনটিতেই নারীরা মনে করে তবুও তো তাকে মনে করার জন্যে পাশে দাঁড়ানোর জন্যে একটি দিন আছে।
অথচ এই দিনটি হতে পারতো বছরের প্রতিটি দিন। নারীর নীরব চোখের জল আমাদের সামনে আসেনা। নিয়মিত তার প্রতি অসম্মান , উদাসীনতার কথা আমরা ভাবিনা। যখন নারীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়ে বলে ...লাথি মার ভাঙরে তালা...তখন আপনি আমি হৈ হৈ করে তেড়ে আসি...কিন্তু এই ভাঙতে চাওয়ার পেছনের কারণ খুঁজে দেখি না। দেখি নারীর ্ওধত্য...। যখন আপনার স্বামী মনে করেন আমার স্ত্রী কোন কাজই করে না...শুধু খায় আর হিন্দি সিরিয়াল দেখে। তখন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে আপনার সংসার তবে কে সামলায়? কাজের মেয়েই যদি সামলায় তবে বিয়ে না করে কাজের মেয়েই রাখুন। অথচ সেখান থেকে আপনি ঠাণ্ডা মাথায় বের হন রাজ্য জয় করতে ? হিন্দি সিরিয়াল দেখা আপনার স্ত্রী কে আপনি কতোটুকু সময় দেন, শেষ কবে তাকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছেন? শেষ কবে তাকে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আদর করেছেন (যৌন আদর নয়)? আপনি তো বন্ধু, কলিগদের সাথে সময় কাটান। আপনার স্ত্রীর মনের খবর কি আপনি রাখেন ?
বাসের সিট নিয়ে কথা উঠে। সমঅধিকারের দাবী করিনা বলেই বাসের সিট নিয়ে কিছু বলতে চাইছিনা... আপনি পুরুষ বাসে দাঁড়িয়ে যেতে পারলে আমি নারীও পারবো...কিন্তু ছোটবেলা থেকে আপনাকে যতোটা যত্ন করে খাইয়ে বলিষ্ট পুরুষ বানানো হয়েছে আমাকে কি ততোটাই বানানো হয়েছে ? বয়ঃসন্ধির পরের নারীর ঋতুস্রাবের কারণে নারীর শরীরের কি বাড়তি যত্ন প্রয়োজন না? নারী কি পায় সেটা ? গর্ভবতী নারীর শরীরের যেই ধকল যায় তা কি পুরুষের শরীরে যায়? নারী এই পৃথিবীকে সচল রাখতেই সন্তান উৎপাদন করছে...এটাকে কেন দূর্বলতা ভাবা হয়? এটাকে কেন শরীর খারাপ ভাবা হয়? কেন সে সময় নারী বাড়তি খাবার খেলে আপনার এতো চোখ টাটায়?
বলছিলাম বাসের সিটের কথা, আমি নারী যখন আপনি পুরুষের পাশে দাড়িয়ে যাবো, তখন আপনি আপনার চোখ দিয়ে আমাকে গিলে খাবেন নাতো? হাত দিয়ে বা উরু দিয়ে ঘষা লাগানোর চেষ্টা করবেন না তো? তার গ্যারান্টি দিন...আমিও আপনার মতো লোকাল বাসে দাড়িয়েই যাব। প্রয়োজনে গর্ভবতী নারীও দাড়িয়েই যাবে বাসে...কিন্তু তার স্বাস্থ্য নিরাপত্তার গ্যারান্টি আপনি দিবেন তো ?
যদি না পারেন তবে...বাকীটা আপনার জন্যে তোলা রইল কী করবেন ।
অনেক সময়ই কথা উঠে নারীকে বাইরে কাজ করতেই হবে কেন? যদি ঘরের পুরুষটি অর্থনৈতিক দিক থেকে সেই পরিমাণ সচ্ছল হয়?
আমিও তাই বলি।
কোন দরকার নেই। রোজগার করাই হয় সচ্ছলতার জন্যে। পুরুষের রোজগারে যদি সচ্ছলতা যথেষ্ট পরিমাণে থাকে তবে নারীকে দরকার নেই বাড়তি আয়ের ।
কিন্তু ...
কিন্তু আপনি পুরুষ যখন আপনার নিজের জন্যে, বাবার বাড়িতে আপনার মন মতো খরচ করবেন আর নারীর প্রতি বা তার বাবা-মায়ের বাড়ির প্রতি একেবারেই উদাসীন থাকবেন...তখন কিন্তু নারী ভাবতেই পারে আমিও পারতাম অর্থ উপার্জন করে আমার মা বাবাকে সহযোগিতা করতে...
আচ্ছা যদি ফুরুৎ করে আপনার প্রাণ পাখিটা আজ উড়ে যায় আপনি কি ভেবেছেন আপনার স্ত্রীর কী গতি হবে? সে কীভাবে আপনার সন্তানদের সুরক্ষা দিবে? আপনি তো নারীকে ঘরে রাখতেই পছন্দ করতেন?
বিশেষ দিনের আমিও প্রয়োজন দেখিনা...কিন্তু আপনার উদারতা, সচেতনতার অভাবই কি আমাকে বিশেষ দিনটি পালন করে আপনার চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চায় না...আমিও মানুষ...?
৭ মার্চ২০১৬
No comments:
Post a Comment